আচ্ছা, তুমি কি জানো, পৃথিবীতে অন্তত এমন দুই কোটিরও উপরে মানুষ আছে যাদের জন্মদিন একইদিনে? না, এটা আন্দাজ করে নয়, এটা তুমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারবে! কিভাবে? চলো দেখে নেওয়া যাক শুরু থেকে।
———
আচ্ছা, তোমাকে আমি পাঁচটা বল দিলাম। তোমার সামনে চারটা ভিন্ন ভিন্ন বক্স আছে। কাজ হচ্ছে, ৫টা বলকে ৪টা বক্সের মাঝে রাখতে হবে। কিভাবে রাখবে?
অনেকভাবেই রাখতে পারো! পাঁচটাই এক বাক্সে। চারটা এক আর একটা অন্য। তিনটা, দুইটা বা তিনটা, একটা, একটা। ইত্যাদি ইত্যাদি অনেকভাবেই। কিন্তু লক্ষ্য করেছ কি? তোমাকে কোনো না কোনো বাক্সে অন্তত দুইটি বল রাখতেই হচ্ছে! এটাই ম্যাজিক! না বুঝলে নিজে বাস্তবে করে দেখতে পারো!
তাহলে আমরা কি বুঝলাম? বাক্সের সংখ্যার তুলনায় বলের সংখ্যা বেশি হলে কোনো না কোনো বাক্সে অন্তত দুইটি বলতে জায়গা দিতে হবে! একেই বলে বিখ্যাত কবুতরের খোপ নীতি!
———-
তোমাদের মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, এই “কবুতরের খোপ” কথাটি কিভাবে উদয় হলো? সেটা এরকমই একটা সহজ উদাহরণের মাধ্যমে। ধরো, তোমার কাছে কবুতর আছে ৫টি কিন্তু কবুতরের খোপ আছে ৪টি! তাহলে কি একই কান্ড ঘটলো না? একটা না একটা খোপে তোমাকে অন্তত দুটো কবুতর রাখতেই হচ্ছে।
এভাবেই বাস্তব জীবনের অনেক সমস্যাকেই কবুতরের খোপ নীতি প্রয়োগ করে সমাধান করা যায়। শুধু জানতে হয় কোনটাকে “কবুতর” ধরবো আর কোনটাকে “খোপ”। যেমন, একটু আগের উদাহরণে “বাক্স” ছিলো “খোপ” আর “বল” ছিলো “কবুতর”। ঠিক তেমনই!
———-
এবার আসো, তোমাকে আমি ৯টা বল দিলাম! বাক্স ৪টা। এবার দেখ তো, তুমি কিভাবে কিভাবে বলগুলোকে বাক্সে রাখতে পারো? সবগুলো রাখতে হবে কিন্তু! বাস্তবে করে দেখতে পারো! লক্ষ্য করবে, একটা না একটা বাক্সে, তোমাকে অন্তত তিনটা বল রাখতেই হচ্ছে!
বাস্তবে না করলে এভাবেও চিন্তা করতে পারো, প্রত্যেকটি বাক্সে দুটি করে রাখলেও একটা বল অবশিষ্ট থেকে যাচ্ছে! ফলে, ওই বাকি একটা তুমি যে বক্সেই রাখো না কেন, সেই তিনটি রাখার শর্ত পূরণ করতেই হবে।
এবারে এটিকে একটা সাধারণ ধারায় আনা যাক। আমরা দেখেছি যে, বলের সংখ্যা খোপ অপেক্ষা বেশি হলে অন্তত দুই বল একটি খোপে রাখতেই হবে। আবার, বলের সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হলে, তিনটি বল। অর্থাৎ, বলের সংখ্যা খোপ অপেক্ষা যতগুন অপেক্ষা বেশি, আমাদেরকে ঠিক তার থেকে একটি বেশি বলকে অন্তত একটি খোপে রাখতেই হবে! বুঝতে পারো নি? প্রথম থেকে আবার পড়ার অনুরোধ রইলো।
এটাকে একটু বীজগণিতের চলক দিয়ে লিখে দেখি এবার! ধরো আমাদের কাছে n – সংখ্যক খোপ আছে আর (n+১) সংখ্যক কবুতর আছে। তাহলে আমরা দেখেছি অন্তত ২টা কবুতরকে একই খোপে রাখতে হবে। আবার ধরো, আমাদের কাছে n সংখ্যক খোপের বিনিময়ে (২n+১) সংখ্যক কবুতর আছে (যেটা আমরা দেখেছি ৪টি বাক্স আর ৯টি বলের ক্ষেত্রে)। তাহলে, আমাদের অন্তত ৩টি কবুতরকে একই বাক্সে স্থান দিতে হচ্ছে। ধরতে পেরেছ কি ফরমুলাটি?
প্রত্যেকবার n এর সহগের সাথে আমরা এক যোগ করছি! অর্থাৎ, যদি n সংখ্যক খোপের বিনিময়ে (৫n+১) সংখ্যক কবুতর থাকে? তাহলে একটি খোপে অন্তত কতটি কবুতর রাখতেই হবে?
হ্যাঁ! (৫+১) = ৬টি!
——–
আচ্ছা, যদি এটা হতো, n – সংখ্যক খোপের বিপরীতে (৫n+২) বা (৫n+৩) টি কবুতর? উত্তর কি পাল্টে যেত?
না! যতক্ষণ পর্যন্ত না আবার নতুন n – সংখ্যক কবুতর যুক্ত হচ্ছে এর সাথে, ততক্ষণ পর্যন্ত উত্তর ৬ ই হবে। তাই না?
তাইলে এটার সাধারণ একটা ফর্মুলা করলে কি দাড়ায়? অন্তত যতগুলি কবুতর একটা খোপে রাখতেই হবে তার সংখ্যা = (কবুতর সংখ্যা/খোপের সংখ্যা) এর নিকটতম পরবর্তী পূর্ণসংখ্যা!
বা, সিলিং(কবুতর সংখ্যা/খোপের সংখ্যা)
নোট: কোনো সংখ্যার “সিলিং ফাংশন” বলতে বোঝায় সংখ্যাটির নিকটতম পরবর্তী পূর্ণসংখ্যা।
তাহলে এবার আসা যাক ওই জন্মদিন সমস্যায়! বলতো, এখানে “কবুতর” কোনটা? আর কোনটা “খোপ”? এটাই কিন্তু এই ধরনের সমস্যা সমাধানের অন্যতম মূল কাজ!
এখানে খোপ হচ্ছে বছরের দিনের আর কবুতর হচ্ছে মানুষ! পৃথিবীর জনসংখ্যা পায় ৭৫০ কোটি। আর বছরে দিন মাত্র ৩৬৫ দিন। তাহলে ঐ ফর্মুলা অনুসারে কি দাড়ায়?
সিলিং(৭৫০ কোটি/৩৬৫) = ২ কোটিরও বেশি!
যদি নির্দিষ্ট করে ধরে নেই পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭৫০,০০,০০,০০০ তাহলে আমার বলতে পারি যে অন্তত, সিলিং(৭৫০,০০,০০,০০০/৩৬৫) জন = সিলিং(২০৫৪৭৯৪৫.২) জন = ২০৫৪৭৯৪৬ জনের জন্মদিন একইদিনে হবে সেটা নিশ্চিত!
পুরোটা পড়ে কিছু বুঝতে পারলে কি? না বুঝলে আবার পড়ার অনুরোধ রইলো! কোনো একটা লাইন বুঝতে পারছ না? সেটা জানাতে পারো কমেন্টে!
জয়তু গণিত ❤️